২০০৮ সালের ৭ মার্চে জরুরী আইনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে লিড নিউজ করায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি থেকে চাকরি চলে যায় তৎকালীন ঐ চ্যানেলের প্রধান বার্তা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শাহনেওয়াজ দুলালের ।৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে লিড নিউজ করার দায়ে ঐ সময়ে ঐ চ্যানেলের যারা বকাঝকা করেছিলেন তাঁরা আজ বর্তমান সরকারের খুবই সুবিধাজনক অবস্থানে আর সাংবাদিক দুলাল এখন চাকরি খুজছে। দুলালের সেই দিনের স্মৃতিই তুলে ধরেছেন তাঁর ফেসবুক পাতায়। নিচে তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
৭ই মার্চের এক টুকরো স্মৃতি
ভেবেছিলাম বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখব না। সহসা ইচ্ছে হলো লেখার। লিখলে জমাট বাধা দু:খ কিছুটা কমতে পারে, মন পাখিটার এমন আবদার থেকেই ঘটনাটা বন্ধুদের জানাতে চাই। অবশ্য অনেকে আগেই জেনেছেন। কেউ আমার কাছে , কাউকে জানিয়েছেন সহকর্মী কেউ। আরটিভিতে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি শুরু থেকে অর্থাৎ ২০০৪ সালের শেষ ভাগে। এর দু’ বছর পর ২০০৭ সালের অক্টোবরে সেখানে ওলট- পালট ঘটে যায়। যারা ওই প্রতিষ্ঠানে সে সময় কাজ করতেন তারা আসল ঘটনাটা জানেন। এই ওলট-পালটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবুও সেদিন দু:খজনক ঘটনা ঘটেছিল। আর এটাও সত্য যে, বার্তা ও অনুষ্ঠান প্রধানের বিদায়ের পর বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হয়ে কর্তৃপক্ষ বার্তা বিভাগের দায়িত্ব দেন ৪ জনকে (পরে আমাকে প্রধান বার্তা সম্পাদক করা হয়) । এর কিছুদিন পর পরিচালক বার্তা হিসেবে যোগ দেন নাদীম কাদির। ওই সময়ে কার কি ভূমিকা ছিল, কে কি করতে পারতাম, এসব নিয়ে পক্ষে- বিপক্ষে কমবেশি যে যার যুক্তি, বক্তব্য বা মত তুলে ধরতে পারেন। সে বিতর্কে যাচ্ছি না।
আমি বলতে চাইছি , ৭ই মার্চে জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনকে ঘিরে আমার জীবনের এক টুকরো স্মৃতি। ২০০৮ সালের ৬ মার্চের রাতের কথা। তখন দেশে জরুরি শাসন চলছিল। সকাল থেকে টানা কাজ করেছি। বার্তা সম্পাদক কেউই ছিলেন না বলে বাড়তি কাজ করতে হতো প্রতিদিন । ফলে রাত ১০টার পর শরীর আর বোঝা নিতে পারত না। ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় সহকর্মী মাহমুদ হাসান মনে করিয়ে দিলেন পরদিন ৭ই মার্চের কথা। রাত সোয়া ১২টার সংবাদে ঐতিহাসিক এই দিন সম্পর্কে প্যাকেজ হতেই পারে। নাফিজা দৌলাকে দায়িত্ব দেয়া হল স্ক্রিপ্ট লেখার। লেখা দেখলাম ঠিক। ফুটেজতো আর কেউ বদলাতে পারবে না। তাই তাকে বললাম ফুটেজ বসিয়ে নিন। এরই মধ্যেই বার্তা প্রধান নাদীম কাদিরের সঙ্গে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কথা বলতে পারিনি। কারণ তার সেল ফোন বন্ধ ছিল। নিউজের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রধান শিরোনাম করার সিদ্ধান্ত দিয়ে বাসায় রওয়ানা করি অফিসের গাড়িতে । কারওয়ান বাজার থেকে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে পৌছতেই বার্তা পরিচালক ফোনে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে বললেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কেন লিড নিউজ করা হলো। আমাদের নিউজের কারণে উত্তরপাড়া থেকে ৩০০ টেলিফোন কল পেয়েছেন। আমাকে উনি দেখে ছাড়বেন ইত্যাদি। রাতের বেলা সবার কথা ধরতে নেই। উনারা অনেক পার্টিতে যান। কি অবস্থায় আছেন, মনকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে বাসায় গেলাম। পরদিন ওই প্যাকেজ আর অনএয়ার করা হয়নি। বিকেল বেলা আরটিভির নয়া মালিক বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব মোর্শেদ আলম নাদীম কাদিরকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে আমাকে আর মাহমুদ হাসানকে ডেকে পাঠালেন। বললেন তোমরা শেখ সাহেবের ২০ মিনিটের ভাষণ প্রচার করছো কেন। এর জবাবে বললাম, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটাইতো ২০ মিনিটের নয়। প্যাকেজের ব্যপ্তী ২ মিনিটই হবে না। তবুও যদি আপনার এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকে তাহলে টেপ এনে পরীক্ষা করে দেখুন। মোর্শেদ সাহেব তখন নাদীম কাদিরের দিকে তাকিয়ে কি নাদীম ওরা কি বলে। এর কোন উত্তর দিলেন না নাদীম সাহেব। পরে আমাদের কাজ করতে যেতে বলা হলো। এর ঠিক এক মাস না যেতেই আকস্মিকভাবে বিদায় করা হয় আমাকে। পরে একে একে অনেকে বিদায় নিয়েছেন। সেই নাদীম কাদির এখন প্রেস মিনিস্টার লন্ডন এবং মোর্শেদ আলম সাহেব ক্ষমতাসীন দলের এমপি। আর আমি চাকুরী খুজে ফিরছি….
Discussion about this post