এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,কক্সবাজার- মিয়ানমারের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী নেতা ও বির্তকিত এনজিওদের অনেকে গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে। ‘রোহিঙ্গা মজলুম নয়-মতলুব, মতলবাজ এনজিও ও বিদ্রোহী সংগঠনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে জনতা’। কারণ রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে ওই সব মহল দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বার্থ হাসিল করে আসছিল। মিয়ানমারে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করুক, তা চান না স্থানীয়রা। কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ পেশাজীবী মানুষ মনে করেন, মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জের ধরে নানা গুজব রটিয়ে মহল সমুহ বাংলাদেশে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশের নানামুখি তৎপরতা অপকৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই সব মহল অনেকটা সফলতাও পেয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে তারা গাড়ী বাড়ী নারী সহ বিভিন্ন কায়দায় সুবিধা ভোগ করেছে। শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু এবং এদের পুঁজি করে মহল বিশেষের অনেকে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক ও সম্পদশালী হয়ে গেছেন। তদন্তপূর্বক এই রোহিঙ্গা নেতা এবং তথাকথিত এনজিও কর্মকর্তাদের সম্পদ তদন্তকরন বায়েজাপ্ত করার দারী জানান সচেতন মহল। তারা মনে করে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করলে সীমান্ত এলাকা আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠবে। তারা ফায়দা হাসিল হবে। একই সঙ্গে এটা বাংলাদেশ এবং জনগণের জন্য বিপদজনক। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিক মিয়া জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা আমার দেশের জন্য বিপদজনক। দেশের সীমান্ত এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি, মাদক ব্যবসা ও জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা অপরাধের জন্য দায়ি রোহিঙ্গারা। কিন্তু মিয়ানমারে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ফের বাংলাদেশে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা নিয়ে আসতে কিছু এনজিও সংস্থাসহ জঙ্গি সংগঠন অপতৎপরতা শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিম এইড, এসিএফ, আরটিএম, রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরএসও, এআরএনওসহ আরও কয়েকটি সংস্থা উখিয়া ও টেকনাফে শরণার্থী ক্যাম্পে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা ক্যাম্পে প−্যাকার্ড দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশে মানববন্ধন করার উদ্বুদ্ধ করছে।’ তিনি জানান, বিপদজনক রোহিঙ্গারা অতীতে মাত্র ৫শ’ টাকায় একজন মানুষকে খুন করার প্রমাণ রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দিতে যে আহ¡ান জানানো হচ্ছে, এটা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুছ বাঙ্গালী, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি, আইন শৃঙ্খলা, দেশ প্রেম, লেখাপড়া, শ্রম বাজার ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিসহ নানা বিষয়ের জন্য পুরোটাই হুমকি এসব রোহিঙ্গা। সে দেশের আভ্যন্তরীণ একটি বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে’। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আলম দাবী করেন, অতীতের রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফ সহ জেলায় বর্তমানেও ভরপুর। এ মুহুর্তে নতুন করে আর কোন শরনার্থী বেসে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রবেশ করতে দেয়া হবোনা এদেশে। মানবতা রক্ষার প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিৎ নয়। এমনিতেই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নানামুখি তৎপরতার কারণে স্থানীয়দের স¡াভাবিক জীবন যাপনে চরম ভাব্ েপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশে থাকা প্রায় চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গা থাকলে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে।” অপরদিকে ,ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে দাবী ঊঠছে গতবুধবার ও বৃহস্পতিবার ধেতে শরনার্থী রোহিঙ্গারা ওইপাড় থেকে এপাড়ে প্রবেশ করার জন্য কিছু ভন্ড নাময়ি মুফতি ও মৌলভীবেশ ধারীরা বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় হাত তুলে আল্লার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন এবং পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহি করছেন। তাদেরকে এই মুহুর্তে সরকারের পক্ষ থেকে এদের চিহ্নিত করা দরকার। তারা ধর্মে নামে রোহিঙ্গাদের পক্ষ হয়ে দালালি করছেন। তারা যত্রতত্র ধর্মে দোহায় দিয়ে ভন্ডামি অব্যাহত রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানিয়েছেন সুশীলসমাজ। উখিয়া উপজেলার স্থানীয় সংবাদকর্মী এম. বশর চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কিছু এনজিও কাজ করে। ওইসব এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করেন, দেশে রোহিঙ্গা থাকলে তাদের চাকরি থাকবে, অন্যথায় তাদের চাকরি থাকবে না। ফলে নিজের চাকরির স¡ার্থে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ওইসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তিনি বলেন, “শুধু অতীতের অপরাধ বিশে−ষণ করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসুক, এটা কেউ চাইবে না।” রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরী মিন্টু বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাত ওই দেশের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ইতিমধ্যে ওই দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি একটি চক্র রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।” এটা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভার প্রতিবেদন পর্যালাচনা করলে দেখা যায়, কক্সবাজারের ৯০ শতাংশ অপরাধ করানো হয় রোহিঙ্গাদের দিয়ে। এরা দেশের ভেতরে পাহাড় দখল, বৃক্ষ নিধন, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাচার, নারী ও শিশু পাচার, ডাকাতি-ছিনতাই করে সমস্যা তৈরি করেছে। অপরদিকে ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে অপরাধ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে তারা। সচেতন মহল বলেন, একজন রোহিঙ্গাকেও স্থান না দিয়ে বাংলাদেশে থাকা সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো দরকার।
Discussion about this post