
১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধ, ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী-ছাত্র-আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান, সহ বাংলাদেশে গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে কুয়েতী নাগরিক সহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগেরও আহবান জানান কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন।বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন । মহান স্বাধীনতা দিবস ও গৌরবময় জাতীয় দিবস উপলক্ষে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস কূটনীতিকদের সম্মানে ষোল এপ্রিল বুধবার এক জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করে। যথা সময়েই হোটেল ক্রাউন প্লাজায় অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করে চলেছে কুয়েতের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, দেশ বিদেশের সাংবাদিক, বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্ট বিএমসির সেনা কর্মকর্তা সহ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে ৪০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন কুয়েতে নিযুক্ত কূটনৈতিক কোরের রাষ্ট্রদূত এবং সদস্য, উচ্চপদস্থ কুয়েতি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং কুয়েতে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন, মিসেস বিলকিস বেগম সিমি সহ দূতাবাসের কর্মকর্তাগন। হল ভর্তি দেশ বিদেশি অতিথিদের মিলন মেলা, একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় আড্ডা চলছে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কুয়েতের মাননীয় আইন মন্ত্রী নাসের ইউসুফ মোহাম্মদ আল-সুমাইত উপস্থিত হতেই শুরু হয় কার্যক্রম। কুয়েতে বাংলাদেশ মিলিটারি কন্টিনজেন্টস্ বিএমসি’র চৌকুশ বাদক সেনা সদস্যদের বাদ্যযন্ত্রের সুরে অতিথিদের নজর কাড়ে। বাদক দলটি দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গানের সুর তুলে রিতিমত চমক লাগিয়ে দেয়। দূতাবাসের নারী কর্মী এবং গৃহীনিদের তৈরি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠা পুলির সাজানো পসরা দেখে যেমন অভাক অতিথিরা তেমনি তৃপ্তির সাথে স্বাদও গ্রহন করেছেন। জানতে পেরেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে।


কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন তাঁর বক্তব্যে সম্মানিত অতিথির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি কুয়েতের আমির, মাননীয় শেখ মিশাল আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ, কুয়েতের নেতৃত্ব এবং জনগণের প্রতি দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী কুয়েতই প্রথম উপসাগরীয় দেশ। ১৯৭৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশ এবং কুয়েত রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জনশক্তি, কৃষি, শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় সহযোগিতা উপভোগ করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে কুয়েত রাষ্ট্রের মাননীয় আমিরের গতিশীল নেতৃত্বে এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দূরদর্শী নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ হবে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।রাষ্ট্রদূত স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য যাত্রার কথাও তুলে ধরেন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথা উল্লেখ করেন।


তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে পরিচালিত গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেন এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক সমাজের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখতে এবং দেশে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এর ভূমিকার উপর জোর দেন।৭ থেকে ১০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে, যেখানে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন, রাষ্ট্রদূত কুয়েত এবং অন্যান্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলিকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে অংশীদার হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি বাংলাদেশের পর্যটন খাতের সম্ভাবনার উপরও জোর দেন, এটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উষ্ণ আতিথেয়তার ভূমি হিসেবে চিত্রিত করেন। তিনি সকলকে বাংলাদেশ ভ্রমণ এবং এর সৌন্দর্য প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করার জন্য উৎসাহিত করেন। তার সমাপনী বক্তব্যে, রাষ্ট্রদূত কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে অবদান রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। দূতাবাসের এমন উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে দেশের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানো সহজ তেমনি উন্নয়নশীল বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশিষ্টরা।
Discussion about this post