
দীর্ঘ কয়েক বছর পর কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে পালিত হলো বৈশাখী উৎসব। শ্রোতাদের মন মাতানো প্রবাসী শিল্পীদের গান যেন রূপ নেয় একখণ্ড বাংলাদেশের। সাথে প্রবাসী গৃহিনীদের তৈরি দেশের ঐতিহ্যবাহী পানতা ইলিশ পিঠা পুলির পসরা স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙ্গালীর অস্তিত্ব, ঐতিহ্য আর ভালোবাসার শিকড়কে।প্রবাসের জীবন যতই ব্যস্ত হোক, বৈশাখ মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। তবে অনেক দেশের শহরে সেই আনন্দ থাকে সীমিত। যখন বেসরকারি কোনো আয়োজক পাওয়া যায় না, তখন প্রবাসীদের একমাত্র আশ্রয় হয় দেশের দূতাবাস। চৈত্রের শেষে বৈশাখের আগমনে, দূরে থাকলেও মন পড়ে থাকে দেশের মাটিতে। আর তাই প্রবাসেও থেমে থাকে না নববর্ষের আনন্দ। তবে বিভিন্ন কারণে কুয়েত প্রবাসীরা সেই সুযোগটি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক বছর থেকে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর এবার নানা আয়োজন আর বাঙালি সংস্কৃতির বাহার নিয়ে বৈশাখ উদযাপন করেছে কুয়েতে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে বৈশাখী উৎসব যেন প্রবাসীদের মনে প্রান ফিরিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার বিকালে দূতাবাসেই আয়োজন করা হয় বৈশাখী উৎসবের। দুপর থেকে দূতাবাস প্রাঙ্গনে আসতে থাকে কুয়েতের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা।


স্থানীয় সময় বিকাল চারটায় পিঠা উৎসবের মধ্যদিয়ে বৈশাখী উৎসবের উদ্বোধন করেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন। প্রবাসী গৃহীনিদের তৈরী নানান পিঠার পসরা সাজিয়ে বসে স্টলে। কেউ রান্না করে নিয়ে এসেছেন পান্তা ইলিস, পিঠা, চটপটি, ফুচকা, পাটিসাপটা, ভাপা, চিতই, দুধপিঠা, তেলপিঠা সহ বাংলা ঐতিহ্যবাহী পিঠা।প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার সংস্কৃতি যেন বৈশাখের এই রঙিন উৎসব শুধু আনন্দই নয়, বরং এটি স্মরণ করিয়ে দেয় নিজেদের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য আর ভালোবাসার শিকড়কে।


প্রবাসে থেকেও হারিয়ে যায়নি বাংলা গানের সুর। বরং সেই সুরই বেঁধে রেখেছে মন, মানুষ আর মাটির টান। প্রবাসী শিল্পীদের কন্ঠে আইলো আইলো রে , বৈশাখের বিকেল বেলায়, মেলায় যায়রে নানান গানের মধ্য দিয়েই প্রাণ পায় বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর ভালোবাসা। শ্রোতাদের মন মাতানো এই আয়োজনে মঞ্চ যেন রূপ নেয় একখণ্ড বাংলাদেশের। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে উচ্ছাসিত প্রবাসীরা। বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর সঞ্চালনায় শুরুতে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন বক্তব্যে বলেন প্রবাসীরা রঙে, ছোঁয়ায়, আবেগে প্রবাসীরা বাংলার পুরো ঐতিহ্যটা অনুভব করুক। ধন্যবাদ জানান তিনি বৈশাখী উৎসব পালনে সকল সহযোগীদের।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাকিবুল করিম চৌধুরী, মিনিষ্টার শ্রম আবুল হোসেন, কাউন্সেলর মোঃ ইকবাল আখতার, তৃতীয় সচিব আবদুল লতিফ ফকিরসহ অসংখ্য প্রবাসী ও সুধীজনরা। নতুন বছরের নতুন প্রভাতে প্রবাসে থাকা এই বাঙালিরা যেন নব আশায় জেগে উঠে। বৈশাখের এই রঙিন উৎসব শুধু আনন্দই নয়, বরং এটি স্মরণ করিয়ে দেয় নিজেদের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য আর ভালোবাসার শিকড়কে। প্রবাসে থেকেও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার এই প্রয়াস, শুধু খাবার বা উৎসবে নয়, এ যেন হৃদয়ের টান, নিজের মাটি ও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার এক নীরব প্রতিজ্ঞা।


Discussion about this post