অগ্নিমন্ত্রে সাঁতড়াও রক্তের নদীতে
ধ্রুব মজুমদার
সময় হয়েছে পথিক জেগে ওঠো প্রভাতে
ওঠে দাঁড়াও, ওঠে দাঁড়াও ঐ সূর্যতেজে
ছুটে চল দুর্বার গতিতে——-
পেছনে তাকাবার নেই সময়।
অগ্নিমন্ত্রে সাঁতড়াও রক্তের নদীতে
ক্ষণিকেই পান কর মৃত্যুর স্বাদ
উপহাস লাঞ্ছনা, জীর্নলোকাচার
হিংসা-দ্বেষ, যুদ্ধ-সংঘাত
সোল্লাসে ভরে দাও প্রেমের প্রভাব।
থেমোনা শুনে জঁং ধরা সভ্যতার ক্রন্দন
পথিক, তোমার দিকে তাকিয়ে
নবপ্রজন্ম, নবজীবনের প্রীতি বন্ধন।
পেন্সিলে আঁকা একটি হাত
ধ্রুব মজুমদার
পেন্সিলে আঁকা একটি হাত বারবার বলে আমাকে
এক মুঠো প্রাণ দাও শুঁকে দেখি কতটা কষ্ট তাতে
চাঁদ আর মেঘের লুকোচুরিতে শরৎ বলে
কতটা শরৎ হারিয়েছে ঝড়া শিউলি ফুলের রাতে।
পেন্সিলে আঁকা একটি হাত , শরৎ , আমি এবং এক কাপ চা
আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিল নিঃসঙ্গতার মাঝে
হালকা বাতাসে ভেসেছে গাড়ি আর কাকের শব্দ
খানিক দূরে এক কুমারীর মায়া ছড়ায় চুলের ভাঁজে
কাছে গিয়ে বললাম – আপনার পাশে একটু বসতে পারি ?
– হ্যাঁ , অবশ্যই বসতে পারেন।
– ধন্যবাদ । আপনার নামটা কি বলবেন ?
– লতা । আচ্ছা আপনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন কেন ?
– এমনি , আমার হাতটা আপনি স্পর্শ করুন
– কেন ? আপনার হাত আমি স্পর্শ করব কেন ?
– এই তো আমার হাত এখনো কোন নারীর স্পর্শ পাইনি ।
– এত পেন্সিলে আঁকা শিল্প মাত্র।
– হ্যাঁ , শিল্প মাত্র। শিল্পেরও যে অনুভূতি আছে, আবেগ আছে
সুখ , দুঃখ সবই আছে। সেও প্রাণ চায়,
কোন এক নারীর ভালোবাসার স্পর্শ চায়।
– সে ক্ষণিকের জন্য। মুছে যাবে, ছিঁড়ে যাবে,
বাতাসে উড়ে যাবে গন্তব্যহীন উদ্দেশে।
– জানি , তবু সে ছলনাময়ী নারী হবে না।
– নারী মানেই কি শুধু ছলনাময়ী ?
– নারী হল মা, বোন , স্ত্রী , কন্যা । এ সবই তো ছলনা
– আর পেন্সিলে আঁকা এই হাত , সে কি ছলনা নয় ?
শিউলি ফোঁটা শরৎ , সে কি ছলনা নয় ?
– সবই বুঝি। কিন্ত চাপা পড়ে একাকীত্তের আড়ালে।
আয়না’
দেবাশীস সাহা। ( মুর্শিদাবাদ, কোলকাতা)
অন্ধকার রঙের হাত
আমাকে ডাকে
দূরে কোথাও মমতাময়ী মা-মাটি-মানুষ বিশ্রামে।
একটু কোথাও আলো নেই
শুধু কয়েকটা চোখ
জ্বলছে
চোখের সামনে
আয়না রঙের সামনে
নগ্ন হয়ে যাওয়া ছাড়া
আমার কিছুই করার ছিল না।
দেবী বেদী গেলে ভুলে যায়
মাটির স্পর্শ।
‘ যমজ মেঘ ‘
– দেবাশীস সাহা
রাতের এনভেলাপে
আলো আসে আমাদের শহরে
নিজের নাম বানান করতে করতে
ওরাং ওটাং গ্যালপিং
সুর ভাজ করছে সংসারের এলজেব্রা
ডোরা ডোরা হলুদ মন খারাপ
আর আমাদের ভয় দেখাতে পারেনা।
যমজ পাড়ায় পাড়ায়
সাফ করছে সাফ রঙের ঢালু
গরম গরম বমি চোয়াল ছাপিয়ে
চিবুক বরাবর ডিসকাউন্ট
ফ্রি রঙ টাইম ডিঙ্গিয়ে
নৈশব্দের কোলাহল ডিঙ্গিয়ে
কে কে এলো
কাদের বাগানে বড় হচ্ছে আর ডি এক্স।
‘ঘুম বৌ’
দেবাশিস সাহা
ছোট ছোট গাছের বাচ্ছা
ডিগবাজি খাচ্ছে ছাদময়
ঝোড়ো হাওয়ার মিছিল
রং রুটে গিয়ে রাঙ্গিয়ে দিল মাতন
মাদল বাজছে
বেডরুমে নাচছে অন্ধকার
নাম ধরে ডাকছে অচেনা গাছ
পোষাকের হাত ধরে
জলে নামল জলতরঙ্গ
ঘুম বৌ আর লাল স্বপন
কাটাকুটি খেলছে দশ বাই দশ
আকাশে।
সাম্প্রতিক ছড়া-১
এক’শ এক চামচা
–সাবেদ সাথী/নিউইংল্যান্ড,ইউএসএ।
এক’শ এক চামচা লাগে
তাঁর সংগে
ভাষন দিতে আসেন যখন
জাতি সংঘে।
এতো চামচা সাথে নেয়ার
কি দরকার
বিমান ভাড়া থাকা খাওয়া
দেয় সরকার।
কর্মিরা সব ঘোরেন যখন
আশ পাশে
চামচারা মুখে হাত লাগিয়ে
খুব হাসে।
মাল খেয়ে টাল হয়
থাকেনা হুঁস
মন্ত্রী আমলা চামচারা করেন
ফাঁস ফুঁস।
স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
-নিগার সুলতানা
মহান বিজয় দিবসকে স্বরণ করছি–
তুই রাজাকার, তুই রাজাকার
গালিটা মন্দ নয়–
একাত্তরে এরাই চেয়েছিল
পাকিস্তানের জয়।
(অনু কাব্য)
‘মা’
মাতৃ ভুমি মা—-
যাকে তুমি নয় মাস গর্ভে করেছ ধারন,
হত্যা নির্যাতন আর রক্ত স্রোতের মাঝে
জন্ম নেওয়া -তোমার স্বাধীনতাকে
শ্রদ্ধায় করছি স্বরণ।
স্বাধীনতা তুমি ধর্মে বর্ণে ছিলে মহিয়ান
তোমার কাছে ছিল না ভেদাভেদ হিন্দু মুসলিম খ্রীস্টান,
সকলের দাবী একটাই ছিল আত্ন-অভিমান
মায়ের ভাষায় বলব কথা- সহজ সরল সমাধান।
মায়ের ভাষা মাতৃভাষা
সবার ভালবাসা,
এই ভাষাতে বললে কথা
মিটে মনের আশা।
মাগো—-
ভাষার জন্য জীবন দিয়ে যুদ্ধ করল যারা
অল্প দিনেই ভুলে গেল শ্ত্রু মিত্র কারা।
রাজাকাররা হয়ে গেল স্বাধীন দেশের মানুষ
বুক ফুলিয়ে চলে তাঁরা, উড়ায় মনের ফানুস।
দেশটা নাকি স্বাধীন করেছে? গর্ব করে কয়
সবাই জানে- একাত্তরে এরাই চেয়েছিল
পাকিস্তানের জয়।
শুধু কি তাই–
তোমার আমার ভালবাসায় পড়লো এদের দৃষ্টি
আমি বাঙ্গালী, তুমি বাংলাদেশী- বিভাজনে হল সৃস্টি।
বাংলার গান, বাংলার প্রান, বাংলার যত কৃষ্টি
কোনটাই তারা পালন করেনা, বলে অনা সৃস্টি।
স্বাধীনতা তুমি রক্তে রাঙ্গানো, আগুন ঝরা দিন
তোমার কণ্ঠে বেজে উঠে করুন সুরের বীন
আমরা অধম আজও পারিনি শোধিতে তোমার ঋণ।
ক্রসফায়ার
-ইমরুল হাসান
ভুল করে কেউ গুলি করে দিলো আমারে।
আমার শাদা শার্ট তো রক্তে ভিজে লাল
একটা গর্ত থেকে একটু একটু বের হয়ে যাচ্ছে
লাল আর লাল
একটা ধাক্কার পর সবকিছু আবার নরমাল
কে যে গুলি করলো আমারে?
হয়তো ভুল করেই
আর আমি ফেলে আসছি আমার লাশ
মেডিকেলের মর্গে;
শরীরের অপমান সহ্য করতে করতে হয়রান
ডাক্তার-বন্ধুরা;
ওই একই গর্তে ডুবে পড়বে আবার।
আমার আর কে আছে?
স্ত্রী-কন্যা-পরিবার
ওরা তো জানতেই পারবে না যে,
কেন এই ভুলটাই ঘটলো?
কেন-ই বা আমি-ই একমাত্র?
এই ঘটনা কেন বেছে নিলো আমারেই?
চিন্তা করতে করতে
কল্পনা করতে করতে
প্রবাবিলিটি খুঁজতে খুঁজতে
একটা সময় ওরা হারায়ে ফেলবে, আমারে!
কেন যে একটা গুলি
একটাই ভুল খুঁজে নিলো আর আমি
আমার হাত, আঙুলগুলি অসাড়…
লাল রং জমে গিয়ে আরো জমাট, আরো গাঢ়…
একটাই তো গুলি ছিলো সেইটা
আর কতোটাই না আকস্মাৎ
যেন একটা রাস্তা পার হওয়ার মতো
হঠাৎ-ই পিছনে তাকিয়ে দেখা
দৃশ্যগুলি মুছে যাচ্ছে
দুপুরবেলা সূর্যাস্তের মতো…
(সম্পূর্ণ…)
Discussion about this post