ষ আয়েশা সিদ্দিকা-সারোগেট মাদার যিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কোনও এক দম্পতির সন্তানকে নিজ গর্ভে ধারণ করেন এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ওই দম্পতির কাছে ফেরত দেন। অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে সারোগেট মায়েরা তাদের গর্ভটাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে থাকেন।
কোনও কোনও নারীদের জরায়ুতে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ায় পুরুষের শুক্রাণুগুলো জরায়ুতে থাকা ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। যার ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিশ্রণে নিষেক প্রক্রিয়াটি না ঘটার কারণে সন্তান গর্ভে ধারণ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া হিস্টারেকটমি, অতিরিক্ত ডায়াবেটিস, ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের গর্ভ ধারণ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তারা সারোগেট মাদারের শরণাপন্ন হন। অনেক সময় দেখা যায় অনেক ব্যস্ত নারী যাদের সন্তান ধারণের মতো দীর্ঘসময় হাতে নেই অথচ তাদের সন্তান চাই, এমন নারীরাও সারোগেট মাদারের প্রতি ঝুঁকছেন।
সারোগেট প্রক্রিয়াটি কী? সারোগেট প্রক্রিয়াটি হচ্ছে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি দম্পতির কাছ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করে একটি বিশেষ ব্যবস্থায় নিষেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাইগোট তৈরি করে ভাড়াটে মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ যেই গর্ভধারণটি ওই দম্পতির নারীর গর্ভে হওয়ার কথা ছিল সেটি সারোগেট মায়ের গর্ভে শুধু প্রতিস্থাপন করা হয় মাত্র। এরপর ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব এসব প্রক্রিয়াগুলো সাধারণ নিয়মেই হয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হল সন্তান গর্ভে ধারণ করেও সারোগেট মায়ের কোনও ধরনের বংশীয় ধারা ওই সন্তানের ওপর পড়বে না। শুধু দম্পতিদের বংশীয় ধারাটিই থাকবে।
সারোগেট মাদার যারা হন : সাধারণ সুস্থ, সবল, সুঠাম দেহের অধিকারী যে কোনও নারীই সারোগেট মাদার হতে পারেন। সামাজিক বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শুধু দারিদ্র্যের কারণে অর্থের লোভে অনেকেই সারোগেট মা হচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতে এ ব্যবস্থা বেশ জমজমাট। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুরে নিঃসন্তান দম্পতিরা রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে গর্ভ মা ভাড়া চাচ্ছেন। আর এ বিজ্ঞাপনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহু মহিলা এগিয়ে আসছেন এ ব্যবসায়। বিজ্ঞাপনের পাতায়, ওয়েবসাইটে এমনকি অটোরিকশার পেছনেও এ বিজ্ঞাপন জ্বলজ্বল করছে অন্ধ্রের এ প্রান্তে। সাধারণ ক্লিনিকগুলো বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে এভাবে গর্ভধারণ করানোর একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। নিঃসন্তান কোনও মহিলাকে সন্তান পাইয়ে দিতে নিজের গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা বেড়ে উঠেছে আকর্ষণীয়ভাবে। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই দালালদের খপ্পরে পড়ে নিুবিত্ত পরিবারগুলোর একাংশ এ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে। গরিব মহিলারা শুধু টাকার জন্যই দালালদের প্রস্তাবে রাজিও হচ্ছেন। যারা ‘সারোগেট মাদার’ হতে চান তাদের বয়স অবশ্যই ৩০ বছরের কম হতে হবে, অন্তত এক সন্তানের মা হতে হবে, কোনও ধরনের যৌন রোগ, হেপাটাইটিস, থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে মুক্ত হতে হবে।
মূলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়। অনেক ক্ষেত্রে এজেন্টরাও নিয়ে আসে নিঃসন্তান দম্পতিদের। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইচ্ছুক দম্পতিদের আÍীয়রাই কৃত্রিম উপায়ে গর্ভ ধারণ করতে এগিয়ে আসেন। এমনকি এ ঘটনাও ঘটছে মেয়ে যখন সন্তানের জš§ দিতে পারছে না, তখন তার মা নিজে নাতি-নাতনির আশায় গর্ভ মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন।
এ ব্যবসায় দালালদের ভূমিকাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সারোগেট মায়েদের খোঁজ দেয় দালালরাই। গোটা ঘটনায় হাতবদল হয় কমপক্ষে ৬-৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ‘সারোগেট’ মা পান দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো। আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা নেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা আর দালালের ভাগে জোটে ৫০ হাজার টাকা।
যে মহিলারা গর্ভ মায়ের পেশায় যুক্ত তাদের কাছে ব্যবসা হল ৯ মাসের। সন্তানের জš§ হয়ে গেলেই সে ব্যবসায় ইতি। শুরু হয় নতুন খদ্দের খোঁজার পালা। তবে বছরে এরা একবারই এ ব্যবসার সুযোগ পান, তাও শরীরের বাঁধন থাকতে থাকতে।
৯ মাসের গর্ভ যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেই প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয়! এক সময়ে দেখা যায় এ মহিলারাই কখনও কখনও দালালের কাজ করছেন। নিজে না পারলে খদ্দের হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে হয় বোন বা কোনও আÍীয়কে এ কাজে লাগিয়ে দেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে তিনিও দুই আড়াই লাখ টাকার মালিক হয়ে যান। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরাই দালালের কাজ করছে। তারাই টাকার লোভ দেখিয়ে গ্রামের গরিব মহিলাদের এ কাজে যুক্ত হতে প্ররোচিত করছে। যামিনী নামের এক মহিলা এ ধরনের এক ক্লিনিকেই ভর্তি। তার কথায়, টাকার প্রয়োজনেই গর্ভ ভাড়া দেয়ার পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছি। এ কাজে আমার স্বামী ও পরিবারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। খাম্মাম জেলার সারপাকা গ্রামেই বাস শাহনাজ নামে এক গৃহবধূর। স্বামী ও পরিবার নিয়েই সেখানে থাকেন বছর ত্রিশের ওই গৃহবধূ। দালালদের খপ্পরে পড়ে এক সময় তিনি রাজি হয়ে যান গর্ভ ভাড়া দিতে। টাকার হাতছানি তাকে টেনে এনেছে এ পেশায়। হায়দরাবাদের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েই তার শরীরে অন্যের সন্তানের বীজ বপন করানো হয়েছিল। এটি ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের ঘটনা। তার স্বামী শেখ শরিফের প্রাথমিক সমর্থন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
তদন্তে জানা যায়, জেলার স্বাস্থ্য দফতরের দুই কর্মী এবং আরও ছয় জন এ দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। যে সময় শরিফ থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ততদিনে গর্ভে থাকা সন্তানটির বয়স সাড়ে সাত মাস পেরিয়ে গেছে। ফলে তিনি এ নিয়ে আর বেশিদূর এগোতে পারেননি।
আবার উল্টো ঘটনাও আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকে স্বেচ্ছায় গর্ভ ভাড়া দিচ্ছেন। গরিবীই একমাত্র কারণ নয়। বরং টাকার নেশায় ছুটছেন তারা। কাগজে বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন। এমনকি ‘সারোগেট ফাইন্ডার ডটকম’ দেখেও অনেকে যোগাযোগ করছেন এসব মহিলার সঙ্গে।
Discussion about this post