পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাস : ইসলামী সমমনা ১২ দলের ডাকা রবিবারের হরতাল ছিল পাবনায় নিরুত্তাপ। কোন বিছিন্ন ঘটনা ছাড়ায় হরতাল পালিত হয়েছে। পাবনায় জামায়াত ইসলামীর ডাকে শনিবার আধাবেলা হরতাল চলাকালে পুলিশের উস্কানিমূলক গুলিবর্ষনে ২জন নিহত ও শতাধিক ব্যাক্তি আহত হওয়ায় পাবনা এখনও থমথমে ভাব বিরাজ করছে। রোববার সকাল ৯টায় সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে পিকেটাররা ইটপাটকেল ফেলে অবরোধ করতে গেলে বিজিবি,র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে পিকেটাররা পালিয়ে যায়। এদিকে শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। দুরপাল্লা বা স্বল্প পাল্লার কোন যাবাহন জেলা শহর বা উপজেলা শহর থেকে ছেড়ে যায়নি। শহর ও শহরের আশপাশে ব্যাটারী চালিত অটো যান এবং নসিমন ও করিমন চলতে দেখা গেছে। শহর জুড়ে বিজিবি, র্যাব ও গােয়েন্দা পুলিশের টহল জোরদার লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও কোন অপ্রতিকর খবর পাওয়া যায়নি। গত শনিবার জামায়াতের ডাকা পাবনায় আধাবেলা হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহত দুই জনের জানাযা রোববার সকাল ৯টায় বাঙ্গাবাড়িয়া বিবি স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে উক্ত এলাকার রাঘবপুর কবরস্থানে সিরাজুল ইসলামের দাফন ও ধর্মগ্রাম কবরস্থানে আলালকে দাফন করা হয়। গত শনিবার দুই জন নিহত ও শতাধিক আহতের পর থেকে উক্ত এলাকায় আতংক ও শোকের ছায়া লক্ষ্য করা গেছে। উভয় এলাকার ৬টি গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ শুন্য। বিশেষ করে শনিবারের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৪টি মামলায় এলাকায় পুরুষ শুন্য হয়েছে। স্থানীয়দের বলতে শোনা গেছে পুলিশ এসে উস্কানিমুলকভাবে গুলি বর্ষন করে আমাদের ভাইদের হত্যা করল আরো অনেককে আহত করলো আবার পুলিশ বাদী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলো এ কোন সভ্য দেশে বাস করছি। থানা সুত্রে জানা যায়, পুলিশের দায়ের করা ৪টি মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় ৩হাজার নেতা-কর্মী ও গ্রামবাসীকে আসামী করা হয়েছে । শনিবারের পুলিশের গুলিতে গুরত্বর আহত ২জন এবং আহত ৬জন আরো ৭জনসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৩ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামী করে পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেন। মামলা গুলো সরকারী কাজে বাধাদান ২টি, ত্রাস সৃষ্টি করে ভাংচুর ক্ষতিসাধন মাারপিট ও সহায়তা দান দ্রত বিচার এর ৪/৫ধারা ১টি, বিস্ফোরক আইনে ১টি। মামলা নং২৭,২৮,২৯.৩০/২৩-০২-১৩। গ্রেফতারকৃতরা হলো, আলমগীর(২২), আলীম মৃধা(৩৭), শিহাব উদ্দিন(১৯), আলম(২৫), সাদ্দাম(১৮), আবুল হাসান(৩৫), শাহিন আলম(১৯), আরিফুল(২৫), সোবহা(৫৫), সাগর(১৮), রিপন(১৮), রহিম(৫৬), গুলিবিদ্ধ গুরতর আহত ইয়াছিন আলী(২৫) ও সবুজ মিয়া (৩০)। আহত গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের পাহারায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য গত শুক্রবার জুময়ার নামাজের পর স্থানীয় মুসুল্লিগণ শাহবাগের আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনের ব্লগে মহানবী (সাঃ) কে অবমাননা ও কুটুক্তি করার প্রতিবাদে পাবনার গণজাগরন মঞ্চ ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের ছবি ভাংচুর করে। এ ঘটনার জের ধরে শুক্রবার দুপুর থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তান্ডবে পাবনা জেলা জামায়াতের কার্যালয়, দৈনিক জীবনকথা অফিস, সাবেক জামায়াতের এমপি সুবহান মাওলানার বাড়ি, ইসলামী ব্যাংক, ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ শহরে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে গত শনিবার সকাল ৬থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জামায়াত ইসলামী হরতাল আহবান করে। হরতালের সমর্থনে শনিবারে সকাল থেকে বাঙ্গাবাড়িয়া পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে পিকেটাররা অবস্থান নিলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনায় ২জন নিহত ও শতাধিক ব্যাক্তি আহত হয়। পুলিশের দাবী হরতালকারীদের আক্রমনে তাদের ৯সদস্য গুরতর আহত হয়েছেন।
Discussion about this post