মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর প্রতিনিধি : সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ফান্দাউকে নববধু দোলেনা আক্তারের (২২) মৃত্যুকি হত্যা না আত্ম হত্যা? তা নিয়ে ব্যাপক রহস্য ও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। শ্বশুবাড়ির লোকজনের দাবী দোলেনা আত্মহত্যা করেছে। অপর দিকে দোলেনার ভাই মোঃ বাবলু মিয়াসহ, তার বাবার বাড়ির লোকজন বলছে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর বাড়ির লোকজন মিলে শ্বাসরোধ করে দোলেনাকে হত্যা করে পরে ঘরের পাশে থাকা বড়–ই গাছের সাথে গলায় ওড়না প্যাচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ বলছে, থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পি এম রিপোর্ট আসলে প্রয়োজনীয় পদপে নিবেন পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাত দুই ঘটিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর পূর্বে পাশ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার, মোরাকুড়ি গ্রামের মৃত মিলন মিয়ার কন্যা, দোলেনা আক্তার (২২) এর সাথে ফান্দাউক গ্রামের জমসেদ মিয়ার পুত্র মোঃ আলেক শাহের (২৫) বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক লোভী স্বামী দোলেনাকে মারপিট করত বলে জানান দোলেনার ভাই বাবলু মিয়া সহ তার পরিবারের লোকজন। ঘটনার দিন রাত আটটায় যৌতুকের টাকা নিয়ে দোলেনাকে মারপিট করে বলে জানান তার ভাই বাবলু মিয়া। পরে ওই খবর জানতে পেরে দোলেনার ভাই বাবলু মিয়াসহ মোড়াকুড়ি গ্রামের বেশ কয়েক জন গন্যমান্য ব্যক্তি দোলেনার স্বামীর বাড়ি ফান্দাউকে আসেন। বিষয়টি আপোষ মিমাংসার জন্য রাত বারটা পর্যন্ত চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। পরে তারা দোলেনাকে তার পিত্রালয়ে নিয়ে যেতে চাইলে জনৈক আহাদ মেম্বার বিষয়টি মিমাংসা করবে মর্মে দোলেনাকে তার নিজ জিম্মায় রাখে। ঘটনার রাতে ঝগড়া হয়েছে বলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন স্বীকার করলেও দোলেনা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী দোলেনার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের। দোলেনার ভাই বাবলু মিয়া জানান, রাত দুই ঘটিকায় স্বামী আলেক শাহ, দেবর মালেক শাহ, জুম্মান মিয়া, মুক্তার মিয়া, সালাউদ্দিন, জসীম উদ্দিন, জহিরুল ইসলাম, আহাদ মেম্বার, হুমায়ূন মিয়া, কামরুল মিয়া ও সিরাপ বেগম পরষ্পর যোগসাজশে গভীর রাতে দুলেনাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের পাশে থাকা বড়–ই গাছে ওড়না দিয়ে প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খবর ফেয়ে পর দিন সকাল বেলা ফান্দাউক মোড়াকুড়ি গ্রামের শত শত নারী পুরুষ দোলেনার লাশ দেখতে ফান্দাউকে স্বামীর বাড়িতে যায়। থানা পুলিশ ঘটনার স্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্যদিকে। প্রায় সাত মাস পূর্বে দোলেনার ভাই বাবলু মিয়ার স্ত্রী রিনা আক্তার সন্তান প্রসবকালে মারা যায়। ওই সময় রিনার গর্ভে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় রওজা আক্তার। রিনা আক্তারের মৃত্যুর পর রওজা আক্তারকে নিয়ে যায় তার ফুফু দোলেনা আক্তার। প্রায় সাত মাস যাবৎ রওজাকে মাতৃস্নেহে লালন পালন করতে থাকে ফুফু দোলেনা। অবশেষে ফুফু দোলেনা ও চলে যায় না ফেরার দেশে। হতভাগ্য শিশুটির কপালে ঘটে বিড়ম্বনা। এখন কি হবে এই হতভাগ্য শিশুটির? দোলেনার ভাই বাবলু মিয়া জানান নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রভাবে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। বাবলু মিয়া জানান তিনি এই বিষয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল কাদের ও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান নিহতের গায়ে আঘাতে কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এখানে দলীয় কোন নেতার প্রভাব নেই। লাশ ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া মর্গে পাঠানে হয়েছে। পিএম রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে দোলেনার স্বামী আলেক শাহের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Discussion about this post