মঈন উদ্দিন সরকার: বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা অতুলনীয়। এই বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। কোনো প্রতিদান নয়, নিজ পরিবারের স্বচ্ছলতাসহ সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে নিজ মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটাতে হয় প্রবাসজীবন। হয়তো একেই বলে এক ধরনের দেয়ালবিহীন কারাগার।
প্রবাসে সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে। সবার এক চিন্তা কীভাবে বেশি উপার্জন করা যায়। মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মান অভিমান পুরণ করতে গিয়ে তারা ভুলে যান নিজের শখ। এমনকি সঠিক ভাবে শরীরের যত্ন পর্যন্ত নেওয়া হয় না অনেকের।
প্রবাসজীবনে কাজের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রবাসীরা হয়তো জয়ী হন। কিন্তু কেউ কেউ পারিবারিক নানা সমস্যার কাছে হার মানেন। একদিকে পারিবারিক সমস্যা, অন্যদিকে কর্মস্থলের সমস্যা, কারো আবার আকামার সমস্যা। এ সব বিভিন্ন সমস্যা মাথায় নিয়ে রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে কেউ কেউ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। কেউ পারিবারিক সমস্যার সমাধান না করতে পেরে আত্মহত্যা বা নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি নজর না রাখায় রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। প্রবাসে আত্মীয়স্বজন না থাকায় এবং দেশে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেক প্রবাসীর মরদেহ দীর্ঘদিন পড়ে থাকে হাসপাতালের হিমাগারে।
কুয়েতেও এমন ঘটনা কম নয়। কুয়েতে এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে ৩৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন, হূদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ২৪ জন এবং আত্মহত্যাজনিত কারণে একজন মৃত্যুবরণ করেন। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১ নভেম্বর শুক্রবার দূতাবাসের হলে প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় দূতাবাসের উর্ধতন কর্মকর্তা কে এম আলী রেজা এ তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন, যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের কর্মস্থলে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে বেশির ভাগের পাওনা টাকা আদায় করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে এক কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের টাকা আদায়ের পর প্রেরণ করা হবে। রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের পক্ষ থেকে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের পরিবারের কাছে শোকবার্তা প্রেরণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. আসহাব উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রবাসে সবাইকে এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, একে অপরের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি দেশে পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি জানান কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নিতে দূতাবাস নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় বুধবার ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিনি নিজে বা উর্ধতন কোনো কর্মকর্তা প্রবাসীদের সঙ্গে মিলিত হবেন। প্রবাসীরা এ সময় তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।
রাষ্ট্রদূতের নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কুয়েত প্রবাসীরা। সভায় উপস্থিত কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দরা রাষ্ট্রদূতকে এ ব্যাপারে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মঈন উদ্দিন সরকার
কুয়েত সিটি, কুয়েত
Discussion about this post