শেখ এহছানুল হক খোকন- কুয়েত ব্যুরো- বাংলাদেশ তথা বাঙ্গালী জাতি একজন বাংলাদেশী নাগরিক যখন বহিবিশ্বের কোন দেশে চাকুরী নিয়ে ছুটে যান পরিবার পরিজন এবং উন্নত জীবন ও অর্থনৈতিক মুক্তি পাওয়ার জন্য, তখন থেকেই সে একজন প্রবাসী। একজন প্রবাসীকে বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা, যাদের ঘামে ভেজা উপার্জন দিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে পায়- অপরদিকে দেশ পায় অর্থনৈতিক রির্জাভে স্বয়ংসম্পূর্নতা। সেক্ষেত্রে একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা সরকারের কাছ থেকে কেমন সুযোগ সুবিদা ভোগ করেন তাহা অনুদাবন করা যাক-
দেশ ছেড়ে বিদেশ বিভুইয়ে চলে এসে সকল দুঃখ-কষ্টকে জয় করতে হয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমন কি বছরের পর বছর। তবুও যখন পরিবার পরিজনের হাসেজ্জাল মুখ এবং সাবলম্বী হয়ে উঠার সম্ভবনা একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা দেখে, তখন সেই যোদ্ধার আনন্দ জাগে। কিন্তু পরিপূর্ন সুখ বা শান্তি তাদের ভাগ্যে ঘটেনা। যেমন একজন প্রবাসী পরিবার পরিজনের যে সমস্ত চাহিদা রয়েছে তা পরিপূর্ন করা দুরূহ। কারন একজন প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় তার বিমান টিকেটের সাথে যে ৪০/৫০ কেজি মালামাল আনার সুবিধা পেয়ে থাকে তা তার ব্যক্তিগত জিনিস পত্রে পরিপূর্ন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পরিবার পরিজনের চাহিদা মেটানোর জন্য অতিরিক্ত পন্য কার্গো তে বুকিং দিয়ে থাকেন। পন্য বুকিং দেওয়ার পর কার্গো কোম্পানী হতে সংশিষ্ট এয়ার লাইন্সে এয়ারওয়ে বিল নিয়ে রেমিটেন্স যোদ্ধা যখন দেশে আসেন, তখন এক সাপ্তাহের মধ্যে ঐ এয়ারওয়ে বিল নিয়ে বিমান বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবাসীদের নিধারিত ব্যাগেজ ডিকলারেশন কক্ষে গিয়ে কি কি পন্য এবং কত কেজি পন্য বুকিং দিয়েছেন তা যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করতে হয়।এক্ষেত্রে ঐ প্রবাসীকে অনেক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে নাজেহাল করে উৎকুস দাবী করা হয় এবং অনেক প্রশ্ন করে তাদের নাজেহাল করা হয়। যেমন আপনি সেখানে কি কাজ করেন, কত টাকা বেতন পান, কতদিন যাবৎ থাকেন, আপনার পরিবারের কত জন থাকেন, আপনার বন্ধু বান্ধবের কোন চালানি দিয়েছে কিনা। আপনি এত মাল এনেছেন কেন ? এ যেন মনে হয় প্রবাসীদের জন্য একটি ব্যাগেজ ইন্টারভিউ বোর্ড ! এই বোর্ডে অনেক প্রবাসী উত্তীর্ন হন আবার অনেক প্রবাসী ফেল করে আসেন ফেল করে আসা একজন প্রবাসী নিজের কষ্টার্জিত পন্য কিনে, বৈধভাবে কার্গোতে বুকিং দিয়ে বিমান বন্দরে এসে নাজেহাল হওয়ার ঘটনা অনেক দুঃখজনক। ফেলের নমূনা পন্যের ঘোষনা পত্রের উপর উক্ত কর্মকর্তা নোট দিয়ে থাকেন সমস্ত পন্য উক্ত প্রবাসীর নয়। অথবা মিথ্যা ঘোষনা দিয়েছেন বলে কোন কোন প্রবাসীকে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা সহ কারিক পরীক্ষার মাধ্যমে পন্য খালাশের অনুরোধ করে থাকেন।
এবার সমস্ত কাগজ পত্র নিয়ে ঐ প্রবাসী সি.এন.এফ নিযুক্ত করে কার্গো ভিলেজে দৌড়া-দৌড়ি শুরু হয়। কমপক্ষে ৪১ জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর সম্পূর্ন করার পর তার পন্য খালাশ হয়। এক্ষেত্রে কোন কোন কর্মকর্তা তিনবার ও স্বাক্ষর করে থাকেন এ এক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নয় কি ? সেখানে ঐ প্রবাসী পন্য খালাশ করতে এক মাসের ও অধিক সময় লাগে। পন্যসুল্ককর পরিশোধের সাথে তাকে গুনতে হয় এয়ারপোট গোডাউন ভাড়া। গোডাইন বলতে বুঝায় পন্য গোডাউনে সযতেœ রাখা। কিন্তু আমাদের যথাযথ গোডাউন না থাকয় পন্য সামগ্রী পরে থাকতে দেখা যায় রানওয়ের মাঠে খোলা আকাশের নীচে। ফলে বৃষ্টিতে ভিজে এসমস্ত মালামাল অনেক নষ্ট হয়ে যায় যা বিগত দিনে মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে। তা দেখে একজন প্রবাসী বা রেমিটেন্স যোদ্ধা মনের মাঝে ব্যাথা পান । অনেক সময় মালামাল পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে লাগেজ কাটাছিরা করা হয় এবং সেখানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা মাল চুরি করে নিয়ে যান এরকম খবর ও মিডিয়াতে প্রচার হতে দেখা গিয়াছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাগেজরুল বহির্ভূত বলে অতিরিক্ত শুল্ক কর ও জরিমানা আরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় শতকরা ৯০% ভাগ প্রবাসীরাই ব্যাগেজ রুল সর্ম্পকে অবহিত নন। সেক্ষেত্রে সরকারের করনীয় ব্যাগেজ রুলের বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যম, বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাস বা কাউন্সিলর ভবন এর মাধ্যমে প্রবাসীদেরকে অবহিত করা। চাহিদার দিকে বিবেচনা করে প্রবাসীদের মতামতের ভিত্তিতে ব্যাগেজ রুলের পরিবর্তন ও সহজিকরনের বিষয়টি সরকারের আমলে নেওয়া উচিত।
এটা তো গেলো এয়ার কার্র্গোর ব্যাপারে বিড়াম্বনা ও হয়রানির কথা- এখন আসা যাক সি কার্গোতে বিড়াম্বনা ও হয়রানি কিভাবে হয়। একজন প্রবাসী দীর্ঘ বছর অনিক্রম করে যখন দেশে ফিরে আসেন তখন তাদের দীর্ঘ দিনের জমানো মালামাল শিপিং কোম্পানীতে দর্রনা ধরে কন্টিনারের মাধ্যমে বুকিং দিয়ে থাকেন পনের শত থেকে চার হাজার কেজি মালামাল। যথা নিয়মে দেশে এসে সংশ্লীষ্ট এয়ার পোটে তার পন্যের ঘোষনা পত্র পেশ করতে হয়। পরবর্তীতে উক্ত কাগজ পত্র বিল অব লোডিং নিয়ে তাকে সি.এন.এফ নিযুক্ত করে বন্ধরের কাষ্টমস হাউজে দৌড়াদৌড়ি করেত হয়। প্রবাসীরা সেখানে জানেন না সেখানের ব্যাগের রুলের মাধ্যমে কি পরিমান পণ্য আনা যায়। ব্যাগেজ রুল বর্হিভূত বলে তাদের কন্টিনার আটকা পরে থাকে মাসের পর মাস। সেখানে কন্টেইনার অনেক পরে থাকার কারনে শিপিং বিল, বন্দর চার্জ, কাষ্টমস চার্জ দিয়ে অনেকে তার শখের জিনিস পত্র বোঝাই কন্ট্রেইনার রিলিজ নিতে অক্ষম হয়ে থাকেন। তখন পরিবার পরিজনের হাসি মুখটি কষ্টে জাড়িয়ে থাকে। ছেলে মেয়ে, স্ত্রী-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কার কথা না ভেবে থাকেন একজন প্রবাসী ? তবে তাদের বেলায় কেন এখন ও ভাঙ্গাচুড়া আর হয়রানী তৈরী থাকে ? যদি ব্যাগেজ রুলের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার উদাহরন ধরি তাদের সরকার শুল্কমুক্ত এতো কম করে এত সুযোগ দেয় কিভাবে ? কার্গো সিষ্টেমে কেন এত হয়রানী হতে হয় প্রবাসীদের ? গত ১ এক বছরে সি-পোর্টে ১০-১২ লক্ষ কেজি মালামাল আটকা পরে আছে বলে জানা যায়। যদি ১ কোটি প্রবাসী থাকে তবে তাদের সাথে ১০ কোটির বেশী মানুষ জড়িত রয়েছেন। তাহলে সরকার কি এদের কাজ গুলো জুলিয়ে না রেখে নির্দিষ্ট ব্যাগেজ রুল প্রস্তুত করতে পারেন না ? সকল জটিলতার অবসান করে খুব দ্রুত বন্দর চার্জ, শিপিং চার্জ, এনবিতার, কাষ্টসম হাউজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ যে সকল স্থানে ভোগান্তিতে পরেন প্রবাসীরা সেগুলো সমাদান করার দাবী উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য সহ সর্বত্র দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রতিদিন খোঁজ নিতে হয় মাল পেলো কিনা বা গেল কিনা। সেখানে ফোন বিল, যাতায়াত সহ অনেক খরচ ব্যয় হয় নিরিহ প্রবাসীদের, এ সমস্ত মালামাল এর জন্য কারো কারো সংসার ও ভেঙ্গে গেছে খবর পাওয়া যায়। তাই সরকারের উচিত এর তরিৎ সমাদান দিয়ে প্রবাসীদের এসমস্ত মালামাল সুন্দর ব্যবস্থাপনা দিয়ে দ্রুততম সময়ে খালাশ করে পরিবারদের হাতে পৌছাতে সাহায্য করা। তা না হলে শুধু রেমিটেন্স যোদ্ধাদের বাহাবা দিয়ে বা সভা সেমিনারে লাভ হবে না। সেক্ষেত্রে যে কোন সময় প্রবাসীদের ক্ষোভে সরকার এবং প্রসাশনকে চাপের মুখে পরতে হতে পারে বলে প্রবাসীরা জানান রিপোটারকে। পুরানো নীতিমালা বা নতুন নীতি মালা যেটাই হোক সেটা প্রবাসীরা জানতে চান না। যেহেতু দেশের রির্জাভে প্রবাসীদের অবদান একটা অবস্থানে সেহেতু তাদের এসমস্ত হয়রানী না করে নিদিষ্ট সল্প শুল্কচার্জ অরোপ করে তাদের বৈধ পন্য সামগ্রী বা মালামাল তাদের পরিবার পরিজন সহ দেশের রির্জাভকে আরো বেগবান করতে প্রবাসীদের জন্য আন্তরিক হওয়া উচিত। কাজেই এত টেবিল না করে, এক টেবিলে নিয়ে আসার দাবী সরকারের কাছে প্রবাসীদের। বর্তমানে বাংলাদেশে সি এবং এয়ার কার্গোর যে স্টাইক চলছে তাহার নিরশন খুর শীঘ্রই হবে বলে সরকারের কাছে প্রত্যাশী দুঃখী এই প্রবাসীরা।
Discussion about this post