শেখ এহছানুল হক খোকন, কুয়েত ব্যুরো -অভাব অনটনের মধ্যে যিনি প্রতিটি মুহুতকে উপলব্দি করতে শিখে ছিলেন। সেই দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি নিয়ে যার প্রতিটি মুহুত ঘুরপাক খেতো, অভাব কাকে বলে তার সর্ম্পকে যার অগাত ধারনা তেমনই একজন মানুষকে আজ এখানে তুলে ধরছি । কুমিল্লা জেলার, চৌদ্দগ্রাম থানার কাতালিয়া গ্রামের মুন্সিবাড়ীর বাসিন্দা আলী হায়দারের মেজো ছেলে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী বিল্লাল হোসেন। আট ভাই বোনের সংসারে অত্যন্ত দারিদ্রতার কষাঘাতে নিজেকে মিলাতে হয়েছে বারং বার। শ্রদ্ধেয় স্যারের দেওয়া অর্থে ১৯৯২ সালে এস.এস.সি. পাশ করেন। এরপর আর লেখাপড়া করতে পারেনি যার মূল কারন ছিল অর্থ সংকট। চলে আসেন ঢাকায় সেখানে এসে গামের্ন্টস এ চাকুরী শুরু করেন, শুরু হয় কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায়। সেখানে প্রায় চার বছর চাকুরী করে কিছু অর্থ জমিয়ে সেই জমানো টাকা এবং চাচাতো বোন জামাইর সহযোগীতার মধ্যে দিয়ে ১৯৯৮ সালে আসেন কুয়েতে। এখানে গৃহকমী (খাদেম) ভিসায় এসে কাজ শুরু করেন। দেখতে সুদর্শন ভদ্রভাষী বিল্লাল হোসেন বলেন- প্রায় তিন বছর কুয়েতির মন জয় করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর কুয়েতি আমাকে “গ্রাস এক্সিভিশন” কোম্পানীতে ফুলের দোকানে কাজ করার সুযোগ করে দেন। পাঁচ বছর ঐ দোকানে কাজ করে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফুলের ব্যবসার দিকে মনোযোগী হই। এরপর নিজেই ব্যবসা শুরু করি এবং দেশ থেকে কচুপাতা ও কচুরিপানা এনে কুয়েতের বিভিন্ন স্থানের কন্ট্রাক নিয়ে ফুলের তোরার সাথে ডেকোরেশন হিসাবে সংযুক্ত করি, এতে কুয়েতিদের কাছে সাড়া পাই। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করতে শুরু করি। এসমস্ত ফুল বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন- হল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ইকোডো, কেনিয়া , তাইওয়ান, মালায়শিয়া ও শ্রীলঙ্কা থেকে ভালো জাতের তাজা ফুল আমদানী শুরু করি। বিশেষ করে এসমস্ত ফুলের মধ্যে অরকিটপ্লান্ট, বেবীঅরকিট, হায়দ্রেনজিয়া, গোলাপ সহ প্রায় ৫০ জাতের ফুল নিয়ে কুয়েতের বিভিন্ন কাষ্টমারদের কাছে প্রশংসিত হই। কুয়েতের সরকারী অফিস আদালত, বড় বড় কোম্পানী, বাসা বাড়ীর বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে আমাদের কাজ শুরু হয়। এই ফুল ব্যবসার আমাকে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী বন্ধুরা সহযোগীতা দিতে থাকে। সেখান থেকেই আমি ব্যবসায় আরো সফল হতে থাকি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যখন আমি বাংলাদেশ থেকে কচুপাতা ও কচুরী পানা নিয়ে আসতাম তখন আমি এই ফুলের ব্যবসায় নতুন একটা সৌন্দয্য তুলে ধরার সুনাম পাই। কিন্তু এই কচুরী পানা ও কচু পাতা দেশ থেকে কার্গো সমস্যার কারনে বন্ধ হয়ে যায়, সেটা এখন শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানী করতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যদি কুয়েতে বা বিশ্বের যারা বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের জন্য যদি কার্গো সুবিধাটা নিশ্চিত হতো তবে এ ব্যবসায় আরো লাভোবান হওয়া সম্ভব হতো। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের দেশের বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিভিন্ন এক্সিভিশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন, তেমনি করে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রোডাক্ট যদি এক্সিভিশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় তবে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে আরো লাভবান হওয়ার কথাও জানান। প্রবাসে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে প্রবাসীরা সফলতা অর্জন করেন তা সত্যিই অনেক প্রশংসার দাবীদার। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য সকল উর্ধতন কর্মকর্তা তথা সরকারের সুদৃষ্টিই দেশের অর্থনিতিতে আরো বেগবান হওয়া সম্ভব। প্রবাসী বিল্লাল হোসেন বর্তমানে কুয়েতের হাওয়ালীতে সেদো ফ্লাওয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন যা ইতি মধ্যে কুয়েতি কাষ্টমারদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এই প্রতিষ্ঠানে আট জন বাংলাদেশী শ্রমিকও কাজ করছেন। কঠোর পরিশ্রম করে আজকে বিল্লাল হোসেন বাংলাদেশের নিজ এলাকায় মসজিদ স্থাপন সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে বিশেষ অবদান রাখার পাশাপাশি একজন পরিচিত মুখ। তিন সন্তানের পিতা বিল্লাল হোসেন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই রয়েছেন। বিল্লাল হোসেনের জন্য রইল শুভকামনা ।
Discussion about this post