হাসান: সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহিম হোসেন খানের জাল স্বাক্ষরে ‘ধাপ্পাবাজি’ শুরু করেছেন আবু সুফিয়ান নামে এক ব্যক্তি। সচিবের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে ’কলরব’ নামে একটি সংগঠনের ভুয়া নিবন্ধন সনদ বানিয়েছেন তিনি। আর সেটা দিয়ে ‘কলরবকে’সরকারের নিবন্ধিত ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন’ বলে বিভিন্ন জায়গায় ‘ধাপ্পাবাজি’ করে বেড়াচ্ছেন। অথচ, কলরব কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মকরার কারণে সুফিয়ানকে সংগঠনথেকে বহিস্কার করা হয়েছে।বহিস্কারের পর ‘কলরব’ নামে আলাদা সংগঠন তৈরি করে ‘ভুয়া নিবন্ধন সনদ’ বানিয়ে সেখানে সচিবের নাম ও জাল স্বাক্ষর বসিয়েছেন। নিজেকে’কলরবের’ প্রধান পরিচালক বলেও দাবি করছেন তিনি। বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছেমন্ত্রণালয়।
ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, কলরব নামক সংগঠনটির যুগ্ম নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান। সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড ও আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগে গত বছরের ৫ নভেম্বর তাকে বহিস্কার করা হয়। চলতি বছরের আগষ্ট মাসে নিজেকে প্রধান পরিচালক ঘোষণা করে’কলরব’ নামে নতুন সংগঠন ঘোষণা করেন আবু সুফিয়ান। এরমধ্যেবানিয়ে নিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের’ভুয়া’ নিবন্ধন সনদ। যার কথিতনম্বর: ০৯-৭২৫৩। সংস্কৃতি সচিবইব্রাহিম হোসেন খানের নাম ও স্বাক্ষর ছাড়াও এ সনদে এবিএম আবুল কালাম নামে আরও এক ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। তার পদবী উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-নির্বাহী।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো নিবন্ধনটিই ভুয়া। সচিবের নাম ও স্বাক্ষর জাল করে বসানো হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতি অধিদপ্তর নামে কোনো অধিদপ্তর নেই। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে কোনোসাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিবন্ধন সনদ দেয়া হয় না। এছাড়া এবিএম আবুল কালাম নামে ওই মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা নেই। পুরো বিষয়টিই অবৈধ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। সুফিয়ানের এ জালিয়াতির খবর পেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩০ আগস্ট রাজধানীরপল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়।উপ-সচিব (প্রশাসন-২) সায়মা ইউনুস স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন’ সনদে সংস্কৃতি সচিবের নাম ব্যবহার করার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি কলরবের পক্ষ থেকে বহিস্কৃত সুফিয়ানের এ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টে একটি জালিয়াতি মামলা করা হয়েছে যা সিআইডির কাছে তদন্তাধীন। এছাড়াও পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (প্রশাসন-২) সায়মা ইউনুস বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিবন্ধন দেয়া হয় না। সচিব স্যারের স্বাক্ষরের তো প্রশ্নই আসে না। একটি সংগঠন এ ধরণের কাজ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পল্টন থানাকে আমরাজানিয়েছি।”
আবু সুফিয়ানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বাক্ষর জাল করার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকেই এ নিবন্ধন নিয়েছি।”
“মন্ত্রণালয়তো এ ধরণের কোনো নিবন্ধন দেয় না” এ তথ্য জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লে তিনি বলেন, “এখনই এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারবো না। আমরা যাকে দিয়ে এ নিবন্ধন করেছি, তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।” কথা প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান জানান, তার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার শাহের মাধ্যমে এ নিবন্ধন সংগ্রহ করেছেনতিনি। এ বিষয়ে পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে একটি জিডি ও মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গেও তিনি অবগত। তবে থানা ‘ম্যানেজ’ করা আছে বলে দম্ভোক্তি করেন সচিবের’স্বাক্ষর জালকারী’ আবু সুফিয়ান।
সরেজমিনে দেখা যায় পুরানা পল্টনের ৬০/সি ভবনের চতুর্থ তলায়’কলরব’ নামে সংগঠনের অফিস খুলে বসেছেন সুফিয়ান। সেখানে বসে সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা ধরণের’ধাপ্পাবাজি’ করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ভবনের নিচে সাইনবোর্ডে লেখা আছে’গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের কেন্দ্রীয় কার্যালয়’। অফিসে গিয়েদেখা যায়, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাবলেটে একটি কক্ষ নিয়ে সুফিয়ানের অফিস। রুমের ভেতরেও সচিবের ‘জাল’ স্বাক্ষর করা ‘ভুয়া’নিবন্ধনটি বাঁধাই করে টাঙানো আছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভুয়া নিবন্ধন’ সনদের ছবি দিয়ে নিজেকে ‘কলরবের’ কাণ্ডারি হিসেবে দাবি করছেন সুফিয়ান। যে কলরব থেকে তিনি বহিস্কৃত হয়েছেন,সে কলরবের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের হুমকি ও অপপ্রচারচালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলরবের প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস বলেন,দীর্ঘদিন সংগঠনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ওআর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কয়েকবার তাকে মিটিং-এ সতর্ক করা হয়। কিন্তু সে সংশোধনের পরিবর্তে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে আবু সুফিয়ানকে আমরা বহিস্কার করেছি। তারপরেই সে এ ধরণের অনৈতিক কাজ করে আমাদেরকে হুমকি দিয়েযাচ্ছে। সচিবের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া সনদপত্র দিয়ে কলরবের মালিকানাও দাবি করছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় আমরা একটি জিডি করার পাশাপাশি সিএমএম কোর্টে একটি মামলাকরেছি। যা বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন।
Discussion about this post