প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তি ও তাঁর জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মের তথা যে সব যাপিত প্রথা, আচার, অনুষ্ঠান ধর্মের অনুষঙ্গ হিসাবে পরিগণিত সেটাকে সংগত ও অসংগত বা গ্রহণ ও বর্জনের পরিক্রমায় কষ্ঠিপাথরে বিচারের পরে কতটুকু গ্রহনযোগ্য সেটার খোলামেলা আলোচনা করতে পারে এবং করাটাও বাঞ্জনীয়। দীর্ঘদিনের মান্যতা দেওয়া প্রথা বর্তমান সময়ের
প্রেক্ষাপটে হয়তো বর্জনীয়। এর ফলে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা সংস্কার যোগ্য কিনা তা বিচার বিশ্লেষন করার ক্ষমতা শুধুমাত্র ধর্মযাজক বা ধর্মগুরুদের হাতে ন্যাস্ত না হয়ে সর্বসাধারণের মধ্যেও আলোচিত হওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে হিন্দুধর্মের তথা সনাতন ধর্মের প্রথা, রীতিনীতি, রেওয়াজের যদি কোন অসংগতি থাকে তবে তা মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করা যেতে পারে। কারণ,“হিন্দুরা যতটা মানবিক ততটা ধার্মিক নয়”। হিন্দুরা বিশ^াস করে “যত মত তত পথ” আবার “সব শিয়ালের-ই এক-রা” ফলে কোন মত বা পথকে তারা প্রাধান্য দেবে সেটা বেঁছে নেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা তাদের আছে- এমন কি ধার্মিক হবার জন্য দৈনন্দিন জীবন চর্চায় বর্ণিত শাস্ত্রবিহিত নির্দেশনা মান্য না হলেও ধর্মচ্যুতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই- কিংবা পরকালের শাস্তির ভয়ে ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচারে বাধ্যবাধকতারও কোন জোর জবরদস্তি নেই। ফলে ধর্মের অনুশাসন বা শাসন হিন্দুধর্মে পরিলক্ষিত হয় না। তবে আচার অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে হিন্দুরা অনেক বেশী এগিয়ে। বারো মাসে তেরো পার্বন এ কথাটা সর্বজন বিদিত। আর জীবন চর্চ্চায় পূজা পার্বনের নিমিত্তে যে সমস্ত আচার অনুষ্ঠান দৃশ্যত: সামাজিক মেলামেশার সুযোগ করে দেয় সে গুলো পালন করাকেই ধর্মপালন বলে হিন্দুরা মনে করে। হিন্দু ধর্ম কথাটা আসলে ঠিক নয়- প্রকৃত অর্থে হিন্দুদের ধর্ম “সনাতন”। সনাতন হচ্ছে যা পূর্বে ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে- যা অক্ষয়, অব্যয়, নিত্য। অতএব সহ¯্র বছর পূর্বের এ ধর্ম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অনেক সংস্কার সাধিত হয়ে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে একই সুরে
ধ্বনিত না হলেও একই সুত্রে গাঁথা- এটাই সনাতন ধর্মের গৌরব। সনাতনি চিন্তা ভাবনায় সহ¯্রাব্দের সুর প্রতিধ্বনিত হলেও সে সুরের তাল- লয় আজও অব্যাহতভাবে এক ও অদ্বিতীয়। আচার, অনুষ্ঠান সর্বস্ব রীতিনীতিকে সনাতন ধর্ম বলে ভাবলে ভাবনায় ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে সনাতন ধর্মের মূল বিষয়গুলো যা আমাদের দৃশ্যত , প্রতিনিয়ত প্রচলিত বিশ^াসের উপর নির্ভর করে বেড়ে উঠেছে সেটাই শেষ কথা নয়। সনাতন ধর্মের মূল রহস্য ঘিরে আছে “সীমার মাঝে অসীমের” মিলনের মধ্যে দিয়ে। সনাতনি বিশ^াসে জন্মান্তরবাদ অর্থাৎ পূণঃজন্মের প্রতি বিশ^াস অটুট। এবং এটাই এধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। কি ভাবে ও কেন পূণঃজন্ম হবে এ সম্পর্কে শাস্ত্রে অনেক ব্যাখ্যা আছে। শাস্ত্রিয় ব্যাখ্যার থেকে বাস্তবে অনেক পরিবারে এমন ধারনা পোষন করা হয় যে পরিবারে কোন
কোন সদস্যের মূখায়ব, কাজকর্ম ঠিক যেন পরলোকগত পিতা মাতার মত, বা অন্য কোন নিকটাতœীয়ের মত যিনি অনেক আগেই পরলোক গমন করেছেন। এ ধারনার মূল কারন ধর্মীয় যতটা নয়, ততটা মনগড়া। মানুষের মত মানুষ হতেই পারে, একজনের অনুকরনে আর একজন অনুকরণীয় হতে পারে, কিন্তু হুবহু কোন কেউই কারো মতো হতে পারে না। মানুষের আচার, আচরণ, রীতি নীতি, বিশ^াস এসব প্রথাগতভাবে গড়ে বা বেড়ে উঠে না। কালের পরিক্রমায় গ্রহণ ও বজর্নের মধ্যদিয়ে লোকায়ত সংস্কারের প্রতিস্থাপনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। অঞ্চলভেদে পূঁজা, পার্বন আচার অনুষ্ঠানের ভিন্নতা থাকলেও ভক্তি এবং শ্রদ্ধাবোধের যে পরাকাষ্ঠা তা হিন্দুত্বেই বেশী পরিলক্ষিত হয়। ‘অহিংসা পরম ধর্ম” এ মহাজনী বাক্যকে জীবনের ধ্রুবতারা মনে করে হিন্দুরা চলার পথকে মসৃণ রাখে। তাঁদের জীবন ধারায় প্রাচীন কু-প্রথা “বলিদান” আজ তিরোহিত এবং সেটা জীবনবোধের সংগে
মানিয়ে নিয়ে ‘প্রতিকী ফল” বলিদানে আজ সর্বজন স্বীকৃত এবং তার মান্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাচীন ধ্যান ধারনাকে “বদ্ধমূল” না করে যুগোপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত মানবে বা মানাতে প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্রের কোন বরখেলাপ তো ঘটেনি বরং নব প্রজন্মের কাছে এটাই যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। গ্রহণ ও বর্জনের রীতি, নীতি প্রথা সকল ধর্মে থাকলেও ধর্মকে মানব কল্যাণে উৎসর্গ করা সহজ। প্রাচীন শাস্ত্র বিহিত অনেক কর্ম বর্তমান যুগে যদি বেমানান হয়, তবে শাস্ত্রকারের অনুমতি ব্যাতিত মানুষের কল্যাণে ধর্ম রক্ষার তাগিদে তার বর্জনের ক্ষমতা ও মানুষের থাকা উচিত। ধর্মের সঙ্গে মানুষের বাঁচা
বাড়ার সম্পর্ক। যা উজ্জিবিত করে, যার সম্যক ধারনা মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে সহায়তা করে তাই ধর্ম। ধারণ করা, পরিপালন করা, পরিপোষন করাই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য। প্রত্যেক দ্রব্যের অন্তর্নিহিত যে ভাব তাই ধর্ম, যেমন : চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করবে, জল তৃষ্ণা নিবারণ করবে, আগুনের ধর্ম দাহন করা- এগুলোর মত মানুষের মৌলিক ধর্ম, সহমর্মিতা, অহিংসা, মানবতা, সমবেদনা ইত্যাদি। শাস্ত্রগত ধর্মাচার থেকে এসব আচারণই মানুষের
ধার্মিক হবার প্রধান পাথেয়। এসব গুনাবলী অর্জনের জন্য মানুষকে যে সমস্ত প্রস্তুতি নিতে হয় তার কিছু রকমফের বিভিন্ন ধর্ম শাস্ত্রে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আতœশুদ্ধি ও আত্ম সংযমের জন্য উপবাস প্রথা সকল ধর্মে স্বীকৃত। তাছাড়া বিজ্ঞান সম্মতও বটে। আমাদের হজম করার জন্য এবং হজম শক্তি যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উপবাস অনস্বীকার্য।
এছাড়া যোগ ব্যায়াম এর মাধ্যমে মানসিক ও শারিরীক সুস্থ্যতা পৃথিবীতে আজ সবচেয়ে চর্চিত। প্রাচীন যুগের এসব পদ্ধতি আধুনিক যুগে আরো আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রহণের নিমিত্ত্বে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। এখানে ধর্মের জন্য এটা করা হচ্ছে বা ধর্ম পালনের জন্য এর প্রসার তা কিন্তু নয়, মানুষ জানতে এবং বুঝতে পারছে তাঁর সুস্থ্য দেহ ও সুন্দর মনের জন্য এগুলো করা প্রয়োজন- ফলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে যোগ ব্যায়াম আজ সর্বজন স্বীকৃত। আসলে আমরা সুস্থ্য ও সুন্দর থাকতে চাই- শুধুমাত্র মন্ত্র উচ্চারণে কিংবা শাস্ত্রবিহিত ধর্ম করলেই ধার্মিক হওয়া যাবে এ কথাটা মোটেই সত্যি নয়। বাহ্যিক আচার আচরণে ধার্মিক মনে হলেও বাস্তবে পার্থিব জগতে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কে কি ভূমিকা পালন করছে সেটাও দেখার বিষয়। আধ্যাত্মিক জগতের অমরত্বের হাতছানি মানুষকে চিরকাল প্রলুব্ধ করেছে তারপরেও মানুষ সবকিছু ছেড়ে সবাই কিন্তু ও পথে পা বাড়াইনি, বরং তারা “মানুষের মাঝে বাঁচিবারে চাই”- ভেবে এখানেই সুখ খুঁজে ফিরেছে। ধর্মীয় সুখ, ধর্মীয় আনন্দ, ভক্তি শ্রদ্ধা, ভালাবাসা এসবই ধর্মের সংগে ধার্মিকের কর্মপদ্ধতিতে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ধর্মপ্রাণ ধার্মিকের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ভালবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আজও মানুষ তাই প্রকৃতিগত ভাবেই ধার্মিক হওয়ার চেষ্টা করে- প্রকৃতিগত ভাবে বলতে এখানে যার যেমন স্বভাব, যে পরিবেশে সে মানুষ হয় সব কিছুর সংগেই তার ভাল মন্দ তথা ধর্মাধর্মের বোধ বা চর্চা নির্ভর করে। কারণ মানুষের মনে এ ধারনার প্রতীতি জন্মেছে যে, “সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” ধর্মের জন্য শাস্ত্রলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ যতটা না কার্যকর তার থেকে শারিরীক সুস্থ্যতার জন্য নিয়ম নীতি, যোগাসন, ব্যায়াম, স্বাত্ত্বিক আহার এগুলো উপযোগিতা অনস্বীকার্য্য। শাস্ত্রীয় মতে স্থুল শরীর ও সুক্ষè শরীরের বর্ণনা আছে- বাহ্যত আমরা যে স্থুল শরীরকে দেখি তাঁকে ঘিরেই আমাদের যে প্রাণ- তাঁরই নিমিত্তে যা করা দরকার তা নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। কিন্তু যা দেখা যায় না, অথচ বিদ্যমান এমন বিষয় যা সুক্ষè শরীরের অন্তর্গত এবং যার রহস্য উন্মোচন প্রাচীন কালের শাস্ত্রবেত্তারা শারিরীক কসরতের যে নির্ণায়ক “সমাধি”র কথা বর্ণনা করেছেন এবং যোগীরা সিদ্ধ যোগীতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন আমরা সেদিকে এখন মোটেই নিজেদেরকে আকৃষ্ট করতে পারছিনা। রাগ, দ্বেষ, হিংসা, লোভ, লালসা যার জনক ভাবনা ও চিন্তার মাধ্যমে মনোজগতকে আলোড়িত করে চঞ্চল ও বিচলিত করে এবং যার কারণে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য
হয়ে মানুষ অন্যায়, অন্যায্য কর্মে প্রলুব্ধ হয় তারই নিয়ন্তা যোগ তথা যুক্ত হওয়া। যুক্ত হয়ে মুক্ত হতে গেলেই দরকার দ্বৈত সত্ত্বার। আর তখনই স্থুল ও সুক্ষè শরীরের ভাবনাটা সাধকেরা মাথায় নিয়ে আসেন এবং সে ক্ষেত্রে সমাধিস্থ যোগীরা একে একে একাকার হয়ে পরমাতœার সংগে লীন হয়ে যান। সাংসারিক মানুষ হিসাবে আমরা সে জগতের কথা ভাবতেও পারিনা কিন্তু প্রকৃত যোগী যারা ধ্যানস্থ হয়ে এসব অভিজ্ঞলদ্ধ জ্ঞান আমাদের মাঝে বিলিয়ে দেন এবং তাদের অমরত্বের যে স্বাদ তারা উপভোগ করেছেন, কিঞ্চিত আমরাও তা আস্বাদন করি তাদের উপলব্ধিজাত নির্যাস থেকে। ধর্মের মর্মকথা নিয়ে অনুচ্চারিত ভাবনার গোলক ধাঁধায় না ঘুরে সহজ সরলভাবে আমাদের যাপিত জীবনের সরলতা দীর্ঘদিন যা আমরা লালন করে আসছি সেখানেই রয়েছে শান্তির সুখবার্তা। ধর্মপালনের নিজের রিপুর তাড়নাকে দমন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। পার্থিব জগতে আমার চারিপাশের পরিবেশে নিজেকে সবার মাঝে বিলিয়ে যে আনন্দ সেখানেই আমার ধর্মের মর্মকথা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্মগুরুর চারিদিকে জয়জয়কার। আধ্যাতিœক সাধনায় তাঁরা কতটা সিদ্ধহস্ত জানিনা, তবে অনেক গুরুই শিষ্যকে যে পরপারে স্বর্গের টিকেট দিতে ব্যর্থ হবেন তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে অযাচিত অপাত্রে ভক্তি নিয়ে বিশ^কবি অনেক আগেই সতর্ক করে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের বোধোদয় হয়েছে বলে মনে করি না। আজও যেভাবে ভক্তি পাত্র হাতে আমরা মোহমুগ্ধ হই জানিনা অন্য কোন ধর্মে
এমনটি আছে কিনা? সনাতন ধর্মে গুরুবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও গুরু নির্বাচনে পরম্পরাকে প্রশ্রয় দেওয়াতে শুরুশিষ্য ক্ষেত্রে ভক্তি প্রাধান্য পেলেও আধ্যাতিœকতার প্রশ্নটি উহ্য থেকে যায়। আধ্যাতিœকতার উন্নতির জন্য যোগ বা ক্রিয়া যেমনটি প্রাচীনকালের মুনি ঋষিরা তা রপ্ত করে গুরু শিষ্য পরম্পরাকে সমৃদ্ধ করতেন আধুনিক যুগে তা কল্পনাতীত। বর্তমান যুগে গুরু পুরোহিত সম্পর্কে,কবি গুরুর ভাষায়,“সাধারণত গুরু পুরোহিত যে
সাধু পুরুষ নহেন, সামান্য বৈষয়িকদের মতো পয়সার প্রতি তাহার বিলক্ষণ লোভ আছে, সে সম্বন্ধে আমাদের কিছু মাত্র অজ্ঞতা নাই, তথাপি তাহার পায়ের ধুলা মাথায় লইয়া আমরা কৃতার্থ হইয়া থাকি কেননা গুরু ব্রহ্ম। এরূপ ভক্তি দ্বারা আমরা নিজেকে অপমানিত করি এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে সম্মান করাই যে আতœসম্মান এ কথা আমরা মনে করি না”। (অযোগ্যভক্তি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। গুরুর ক্ষেত্রে ভক্তিভাব অনস্বীকার্য-কিন্তু গুরুদেবের চারিত্রিক মহিমা এবং আধ্যাতিœক জ্ঞানের ভান্ডার নিয়ে প্রশ্নাতীত সংশয় থাকলেও সেখানে
আতœসম্মান রক্ষার তাগিদে গুরুভক্তিতে যদি ভাটার টান পরিলক্ষিত হয় তাহলে কি তা দোষের হবে? আসলে এ ক্ষেত্রে ভালো মন্দ যাঁচাই বাঁছাই করার ক্ষমতা কি ভক্তকুলের থাকতে পারে না? এমন কিছু নীতি কথা দিয়ে ভক্তকুলকে আষ্টে পৃষ্টে বাঁধা হয়েছে যে ভক্ত মুক ও বধীর হতে বাধ্য। যেমন “গুরু নিন্দা অমার্জনীয় অপরাধ” এ কথা মানলাম কিন্তু কোনো গুরু যদি নিন্দনীয় কর্ম করেন তাহলেও কি মানতে হবে ? তবে সে অপরাধের দায়ে অন্ধ বিশ^াসের ভক্ত স্বর্গে গেলেও, জ্ঞানী ভক্তরা নরকে যেতে বাধ্য থাকবে। আমরা সাধু গুরুদের এমনি উচ্চাসনে বসিয়েছি যে তাদের পাদোদোক পানেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করি না। বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞান মনস্ক ভক্তদের এসব ভেবে দেখার অনুরোধ করবো। পরিশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “অযোগ্যভক্তি” প্রবন্ধের কতিপয় লাইন উদ্বৃত করতে চাই ‘ভক্তির রাজ্যেও একরূপ মিশ্রণ ঘটাইয়া আমরা ভক্তির আধ্যত্মিকতা নষ্ট করিয়াছি। সেই জন্যই আমরা বরঞ্চ সাধুশুদ্রকে ভক্তি করিনা, কিন্তু অসাধু ব্রাহ্মণকে ভক্তি করি। আমরা প্রভাতে সূর্যালোকিত হিমাদ্রি শেখরের প্রতি দৃকপাত না করিয়া চলিয়া যাইতে পারি কিন্তু সিন্দুরলিপ্ত উপলখন্ডকে উপেক্ষা করিতে পারি না। চরমভাবে এ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারলে পারলৌকিক জীবন অপেক্ষা ইহলৌকিক জীবনে যে মঙ্গল বয়ে আনবে এ কথা নিশ্চিত ও ধ্রুব সত্য”।
সত্যরঞ্জন সরকার: (প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, সরকারী হাজী মুহাম্মদ মুহাসীন কলেজ, খালিশপুর, খুলনা। বর্তমান কুয়েতস্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত)
Discussion about this post