তালেবানরা কাবুল দখল করার পর থেকে আফগানিস্তান নিয়ে চর্চা চলছে আন্তর্জাতিক মহলে। সেখানে ভারতসহ অনেক দেশের বাসিন্দা এখনও আটকা আছেন। অনেক দেশই সেখান থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকের হয়তো জানা নেই, বলিউড অভিনেতা কাদের খানের পরিবারও থাকত আফগানিস্তানে। সেখান থেকে এসে বলিউডে জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রখ্যাত এই অভিনেতা। অনেকদিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাদের খান জানিয়েছিলেন সেসব কথা।
১৯৩৭ সালে ২২ অক্টোবর কাবুলে জন্ম নেন কাদের খানের। তার বাবা ছিলেন কান্দাহারের বাসিন্দা এবং মা ছিলেন পাকিস্তানের বাসিন্দা। ওই সাক্ষাৎকারে কাদের খান জানান, তার জন্মের পরই কাদেরের মা বলেছিলেন এই জায়গা তার সন্তানদের জন্য সঠিক নয়। কিন্তু কীভাবে কাবুল থেকে বার হওয়া যায়, সেসব দিক ভেবে কাদেরের পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে।
কাদের বলেন, সেই সময় চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটছিল আমাদের। কিন্তু মা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। পরবর্তীতে সামরিক বহরের সঙ্গে আমারা ভারতে আসি।
কাদের জানান, আফগানিস্তান থেকে ভারতে পা রাখার পরে প্রতিনিয়ত তার পরিবার ও তাকে লড়াই করতে হয়েছে। কাদের খানের পরিবার মুম্বাই আসার পর তাদের ঠাঁই হয়েছিল সেখানকার কামাঠিপুরা বস্তিতে। ওই এলাকা মুম্বাইয়ের একটি যৌনপল্লি এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল।
কাদের ওই সাক্ষাৎকারে আরও জানান, তার বয়স যখন মাত্র ৩ বছর তখন তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপরে বাধ্য হয়ে আবার বিয়ে করেন তার মা। কিন্তু সৎ বাবা খুবই অত্যাচার করতেন। কাদের খানকে পড়াশোনা করার জন্য বরাবর উৎসাহ দিতেন তার মা। কিন্তু মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা উপার্জন করার জন্য তাকে তখন স্থানীয় কারখানায় কাজ করার প্ররোচনা দিতেন লোকজন। কিন্তু মা তা চাইতেন না। কাদের খানের মা তাকে বুঝিয়েছিলেন, এই ৪-৫ টাকা আমাদের বাড়িতে খুশি বা খাবার আনবে না। যদি সত্যি তুমি আমাদের পরিবারে খুশি আনতে চাও সেক্ষেত্রে তুমি পড়াশোনা কর। অন্যকিছু কর না। এখানে লড়াই করার জন্য আমি আছি।
অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে কাদের খান, ইসমাইল ইউসুফ কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং পরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে বলিউডের কিংবদন্তী তারকা দিলীপ কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার তার জীবন পুরোপুরি বদলে দেয়। একাধিক সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কাদের খান মারা যান।
Discussion about this post